বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ফেরার পথে পা খানিকটা টেনে হাঁটছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। কারণ জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, পায়ে ব্যথা প্রচণ্ড। এক পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ছিল, এই ম্যাচে টান লেগেছে আরেক পায়েও। প্রস্তুতি ম্যাচটিতে চোট ছোবল দিয়েছে মুস্তাফিজুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকেও।
কারও চোটই খুব গুরুতর নয়। তবে একটু এদিক-সেদিক হলে গুরুতর হতেও পারে। বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগে বাংলাদেশ অধিনায়ককে ভাবাচ্ছে নিজের ও সতীর্থদের চোট।
এ ম্যাচের আগের দিন ফিল্ডিংয়ের সময় ঊরুর ওপরের দিকে টান লাগে তামিম ইকবালের। যদিও গুরুতর কিছু নয়, তবু সতর্কতা হিসেবে ম্যাচটি খেলেননি বাঁহাতি ওপেনার।
মাশরাফি ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট বয়ে বেড়াচ্ছিলেন আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচটিতে খেলা অনিশ্চিতও ছিল। ম্যাচের আগে পায়ের অবস্থা একটু ভালো অনুভব করায় খেলতে নামেন। খানিকটা অনুশীলনের তাগিদও ছিল। নতুন বল হাতে নিয়ে টানা দুটি মেডেন নিয়ে শুরু করেন। এক স্পেলে বোলিং করেন টানা ৬ ওভার।
ষষ্ঠ ওভারে গিয়ে টান লাগে বাঁ হ্যামস্ট্রিংয়ে। এই চোটও তার বেশ পুরোনো, মাথাচাড়া দিয়েছে আবার। ৬ ওভারের স্পেল করা জরুরি ছিল কিনা, এই প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন অনুশীলনের তাগিদের কথা।
“এসব ক্ষেত্রে আমার আসলে অনেক সময় সমস্যা হয় প্রথম ১-২ ওভার করতে। সেটুকু করতে পারলে পরে আর সমস্যা হয় না। আজকেও হচ্ছিল না। কিন্তু ষষ্ঠ ওভারে টান লেগে গেল। ৪-৫ ওভারে থামতে পারতাম। কিন্তু ওই সময় রোহিত ও কোহলি বেশ অস্থির হয়ে উঠছিল রানের জন্য, শট খেলতে চাচ্ছিল বারবার। মনে হলো, এমন আক্রমণের সামনে প্র্যাকটিস করা জরুরি।”
পায়ে টান লাগার পর ফিল্ডিংয়ে অনেকটা সময়ই মাঠের বাইরে ছিলেন অধিনায়ক। মাঠ পরিচালনা করেছেন তখন সাকিব আল হাসান।
ম্যাচ শেষে হোটেলে ফেরার পর মাশরাফির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছেন ফিজিও তিহান চন্দ্রমোহন। এসব ক্ষেত্রে ফিজিওদের পরামর্শ থাকে সাধারণত ৫-৬ দিনের বিশ্রাম। এখন সেই উপায় নেই, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের আগে সময় আছে ৪ দিন। অনেক চোট-আঘাত সয়ে ছুটতে থাকা অধিনায়ক এবারও মাঠে নামবেন যতটা সম্ভব এই কদিনে ফিট হয়ে। তবে কয়েক দিন হয়তো ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারবেন না, এই নিয়ে আক্ষেপ করলেন বারবার। এই চোট তাকে ম্যাচ খেলা থেকে থামাতে পারবে না। কিন্তু অধিনায়ক চিন্তিত অন্যদের চোট নিয়ে।
ভারতের বিপক্ষে ৬ ওভারের প্রথম স্পেলের পর আর বোলিং করতে পারেননি সাইফ। শেষের দিকে অন্তত দুটি ওভার করার কথা ছিল তার। কিন্তু পিঠের ব্যথায় মাঠ ছাড়েন তিনি। মাঠেই নিতে হয়েছে ব্যথানাশক। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজেও চোটের কারণে তাকে পাওয়া যায়নি সব ম্যাচে। বোলিং আর না করলেও পরে অবশ্য ব্যাটিং করেছেন সাইফ।
মুস্তাফিজ এ দিন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন প্রথম স্পেলে। ১৩৫ থেকে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ধারাবাহিকভাবে বোলিং করলেন সম্ভবত অনেক দিন পর। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে টান লাগে কাফ মাসলে। খুব খারাপ কিছু নয় এটিও। তবে চোটের সঙ্গে এই বাঁহাতি পেসারের যে সখ্য, তাতে ঘরপোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ থেকে ভয় পাওয়ার কারণ যথেষ্টই আছে।
এছাড়াও কাঁধের চোটের কারণে মাহমুদউল্লাহর বোলিং করতে না পারার ব্যাপার তো আছেই। সাকিব আল হাসান মাত্রই সেরে উঠলেন পিঠের পেশির চোট থেকে। সদ্য সেরে উঠেছেন রুবেল হোসেনও। সব মিলিয়ে শঙ্কার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
মাশরাফির ধারণা, অনেক চোটের উপত্তি আয়ার্ল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে। সেখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় গা গরম থাকত না বেশিক্ষণ, জমে যেত শরীর। সেই অবস্থায় মাঠে হুট করে বাড়তি কোনো চেষ্টা করতে গেলে অনেক সময় টানা লাগে শরীরের নানা জায়গায়।
এখনও পর্যন্ত কারও চোটই ম্যাচ খেলতে না পারার মতো মতো নয়। তবে একটু অবনতি হলেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার অবস্থায় যেতে পারে। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ অধিনায়কের দুশ্চিন্তা এখন সেটাই, “ভালোয় ভালোয় এই কটা দিন পার করতে পারলেই হয়!”